চিয়া বীজ মরুভূমিতে জন্মানো সালভিয়া হিস্পানিকা উদ্ভিদের বীজ। চিয়া বীজ মধ্য ও দক্ষিণ মেক্সিকোতে অবস্থিত পুদিনা পরিবারের একটি ফুলের উদ্ভিদ। এটি সাদা ও কালো রঙের এবং তিলের মতো ছোট সাইজের হয়। নিচের আলোচনায় আমরা চিয়া বীজ এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে পারবো।
স্বাস্থ্য সচেতন মানুষদের জন্য চিয়া সিড একটি গুরুত্বপূর্ণ খাবার। প্রচুর পুষ্টিগুণ সম্পন্ন এই বীজে রয়েছে কমলালেবুর থেকে সাতগুণ বেশি ভিটামিন সি, দুধের চেয়ে ৫গুণ বেশি ক্যালসিয়াম, কলার থেকে ২ গুণ বেশি পটাশিয়াম, মাছের থেকে ৮ গুণ বেশি ওমেগা ৩, পালং শাকের থেকে ৬ গুণ বেশি আয়রন, ব্লবেরি থেকে ৩ গুণ বেশি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ব্রকলি থেকে ১৫ গুণ বেশি ম্যাগনেসিয়াম, এছাড়াও এতে রয়েছে প্রোটিনের ৯ টি অ্যামাইনো অ্যাসিড, ওমেগা ৩, ওমেগা ৬ ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি১ ,ভিটামিন বি ২, ভিটামিন বি ৩, পটাশিয়াম ,ম্যাগনেসিয়াম , জিংক ,ফসফরাস, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যে কারণে চিয়া বীজকে বলা হয় সুপার ফুড।
চিয়া বীজের উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। সুপার ফুড এই বীজের কি কি উপকারিতা আছে আসুন আমরা জেনে নেই।
**আমাদের শরীরে ভালো ব্যাকটেরিয়া আছে যেগুলো আমাদের উপকার করে এবং খাদ্য হজমে সাহায্য করে। ভালো ব্যাকটেরিয়াকে বলা হয় প্রোবায়োটিক। আর এই প্রোবায়োটিকের খাদ্য হচ্ছে ফাইবার। চিয়া বীজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। প্রতি ২৮ গ্রাম চিয়া বীজে রয়েছে দশ গ্রাম ফাইবার, যা আমাদের দৈনিক চাহিদার ৪০ শতাংশ পূরণ করবে। তাই আমাদের শরীরের ভালো ব্যাকটেরিয়াকে বাড়ানোর জন্য চিয়া বীজের গুরুত্ব অপরিসীম।
**প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকার কারণে যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা রয়েছে তারা যদি নিয়মিত চিয়া বীজ খেতে পারেন তবে এই সমস্যা থেকে অনেক উপকার পাওয়া যাবে।
**ডায়াবেটিস রোগী চিয়া বীজ খেলে ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকবে। আমরা সারাদিন যে খাবার খাই তার মধ্যে যে পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট আমাদের শরীরে প্রবেশ করে তা রক্তের সঙ্গে মিশে রক্তের সুগারের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। নিয়মিত চিয়া বীজ খেলে কার্বোহাইড্রেট সহজে শরীরে শোষিত হয় না ফলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে না। ফলে টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ব্লাড সুগার কন্ট্রোল করা খুব সহজ হয়ে যায়।
**ওজন নিয়ন্ত্রণে চিয়া বীজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খাবার খাওয়ার আধঘন্টা আগে চিয়া বীজ খেলে আমাদের পাকস্থলীর মধ্য দিয়ে চিয়া বীজ আরো কিছু পানি শোষণ করে পাকস্থলীর বেশ কিছু অংশ ভর্তি করে তখন আমাদের পাকস্থলীতে একটা ফুলনেস আসবে এর ফলে আমরা কম পরিমাণ খাবার গ্রহণ করব।কম খাবার খাওয়ার কারণে শরীরে কম ক্যালোরি প্রবেশ করবে যার জন্য ওজন নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
**হার এবং মাংসপেশিকে মজবুত রাখার জন্য যে সমস্ত খনিজ উপাদান প্রয়োজন তা হল ক্যালসিয়াম,ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস. চিয়া বীজে এই খনিজ উপাদান ভরপুর মাত্রায় রয়েছে । সারাদিনে যদি ২ টেবিল চামচ চিয়া বীজ খেতে পারেন এর মধ্যে যত পরিমান পুষ্টি উপাদান থাকে তা একটি মানুষের ১৮ শতাংশ ক্যালসিয়াম, ২৭ শতাংশ ম্যাগনেসিয়াম, ৩০ শতাংশ ফসফরাসের পরিপূরক। হার এবং মাংসপেশিকে মজবুত করতে চিয়া বীজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
**চিয়া বীজের মধ্যে যে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার রয়েছে তা রক্ত থেকে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কম করে এবং ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি করে। এর ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশ কমে যায়।
**চিয়া বীজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
**চিয়া বীজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড যা ত্বকের ব্লাড সার্কুলেশন এর মাত্রা বৃদ্ধি করে, স্কিনের ড্রাইনেসের মাত্রা কম করতে সাহায্য করে। অনেকের অল্প বয়সে ত্বক ঝুলে পড়ে অর্থাৎ খুব কম বয়সে বৃদ্ধ মানুষের মত দেখায়, নিয়মিত চিয়া বীজ সেবনে এই সমস্যা দূর হয়ে যায়।
**শরীর থেকে টক্সিন অর্থাৎ বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে। পেটের প্রদাহ জনিত বা গ্যাসের সমস্যা দূর করে এবং ভালো ঘুমাতে সাহায্য করে।
চিয়া বীজের নিজস্ব কোন স্বাদ বা গন্ধ না থাকায় যে কোন খাবারের সাথে সহজেই মিশে যায় এবং যেকোনো খাবারের সাথে খাওয়া যায়। দুধ বা পানিতে মিশিয়ে খেলে বাড়তি উপকারিতা পাওয়া যায়। খাওয়ার আগে ১০-১৫মিনিট ভিজিয়ে রেখে খাওয়া ভালো। চিয়া বীজ সকালে লেবু পানির সাথে খাওয়া যায়, ডাল বা যে কোন সবজির সাথে, সালাদ বা পুডিং এর সাথেও খাওয়া যায়। এছাড়া এক কাপ টক দইয়ের সাথে এক টেবিল চামচ চিয়া সীড দিয়ে সারারাত রেখে দিলে তা সকালে খালি পেটে খেলে উপকার পাওয়া যায়। চিয়া বীজে যে কোন সময় খাওয়া যায় তবে সকালে খাওয়ার আগে এবং রাতে ঘুমানোর আগে খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়।
প্রত্যেকটি খাবারের উপকারিতার পাশাপাশি অপকারিতা ও রয়েছে। চিয়া বীজের উপকারিতা বেশি হলেও অতিরিক্ত সেবনের কারণে এর অপকারিতা ও দেখা যায়:
গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়া অনেক উপকার বয়ে আনতে পারে, তবে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। নিচে চিয়া সিডের উপকারিতা ও অপকারিতা দেওয়া হলো:
উপকারিতা:
অপকারিতা:
চিয়া বীজের যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি অপকারিতাও রয়েছে তাই গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড গ্রহণের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
বিভিন্ন ধরনের খাবারের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে জানতে ভিজিট করুন TEST FOOD BD.
গাজর (Carrot) খুবই জনপ্রিয় একটি শীতকালীন সবজি হলেও এখন সব মৌসুমে কমবেশি পাওয়া যায়। গাজর…
ওটস (Oats) হলো এক ধরনের পূর্ণ শস্য যা প্রধানত Avena sativa উদ্ভিদ থেকে পাওয়া যায়।…
মিষ্টি আলু (Sweet Potato) একটি মিষ্টি স্বাদের কন্দজাতীয়,স্টার্চযুক্ত, সবজি। যা মূলত এর মিষ্টি স্বাদ ও…
বিটরুটকে (Beetroot) সাধারণ ভাষায় আমরা বিট বলে থাকি। এর বৈজ্ঞানিক নাম BETA VULGARIS। লাল বা…