Categories: Uncategorized

ওটস Oats খাওয়ার সঠিক সময়, পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা

ওটস (Oats) হলো এক ধরনের পূর্ণ শস্য যা প্রধানত Avena sativa উদ্ভিদ থেকে পাওয়া যায়। স্বাস্থ্যকর খাবারের তালিকায় গুরুত্বপূর্ণ একটি খাবার ওটস (oats)। ওটস প্রতিদিন জনপ্রিয় হচ্ছে। ওটস চাল ডালের মত একটি শস্য তাই ভাত রুটির পরিবর্তে অনেকেই  তাদের ডায়েট চার্ট এ প্রতিদিন রাখছেন ওটস। আবার অনেকেই সকাল বা বিকেলের  নাস্তায় খেয়ে থাকেন ওটস। ওটস ফাইবারের খুব ভালো উৎস। এর কার্বোহাইড্রেট হজম করতে সময় লাগে ফলে লম্বা সময় ধরে খিদে পায় না এবং কম খাবার খাওয়া হয়, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এক কাপ রান্না করা ওটমিলে ৪ গ্রাম ফাইবার থাকে যা দৈনিক চাহিদার ১৬ ভাগ পূরণ করে। নিচের আলোচনায় আমরা ওটস খাওয়ার সঠিক সময়, পুষ্টিগুণ এবং উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পারবো।

ওটস এর পুষ্টিগুণ:

ওটস হচ্ছে কার্বোহাইড্রেট এবং ফাইবারের খুব ভালো কম্বিনেশন। ওটস এ রয়েছে বিটা-গ্লকোন ফাইবার। ওটস প্রোটিন এবং অ্যামাইনো এসিডের একটি ভালো উৎস। এছাড়া এতে রয়েছে মিনারেলস, ভিটামিন। এক কাপ ওটস এ রয়েছে ৫১ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ১৩গ্রাম প্রোটিন ,ফাইবার  রয়েছে ৮ গ্রাম এবং ক্যালোরি রয়েছে  ৩০৩ ক্যালোরি। তাই বলা যায় অবশ্যই ওটস একটি স্বাস্থ্যকর খাবার।

ওটস এর উপকারিতা:

ওটস (Oats)  এর অনেক উপকারিতা রয়েছে। নিচে কিছু উল্লেখযোগ্য উপকারিতা দেওয়া হলো:

  • আমাদের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে pollution এর জন্য এবং unhealthy লাইফ স্টাইলের জন্য প্রতিনিয়ত আমাদের শরীর থেকে হাজার হাজার  কোষ ড্যামেজ হয়ে যায়, তার জন্য বিভিন্ন প্রকার শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। ওটস এর মধ্যে এক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যার নাম polyphenol এটি আমাদের শরীরের কোষগুলোকে damage  এর হাত থেকে রক্ষা করে।
  • ওটস এর মধ্যে থাকা  বিটা গ্লুকোন ফাইবার রক্তে কোলেস্টরল এর মাত্রা কম করতে সক্ষম। নিয়মিত ওটস খেলে শরীরের খারাপ কোলেস্টেরলের অক্সিডেশন প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয় এবং বিভিন্ন ধরনের হার্টের সমস্যা থেকে দূরে থাকা যায়। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। এছাড়া উচ্চ রক্তচাপ ও নিয়ন্ত্রণে রাখে। সব ধরনের কার্ডিওভাসকুলার অসুখের ঝুঁকিও কমায়।
  • নিয়মিত ওটস খেলে এর মধ্যে থাকা বিটা গ্লুকোন রক্তের মধ্যে ইনসুলিনের সেনসিটিভিটি বাড়িয়ে দেয়। ইনসুলেনের সেনসিটিভিটি বেড়ে গেলে কম পরিমাণ ইনসুলিন বেশি পরিমাণ কার্বোহাইডেট ভেঙ্গে এটিকে এনার্জি বানিয়ে  শরীরের কোষে কোষে পৌঁছে দিতে পারে। এছাড়া বিটা গ্লুকোন কার্বোহাইড্রেট এর শোষণ কমিয়ে দেয়  এর ফলে হঠাৎ করে কোন খাবার খাওয়ার সাথে সাথে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে না। এভাবে ওটস ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
  • ওটস এর মধ্যে থাকা বিটা গ্লুকোন ফাইবার  পেট নরম রাখতে সাহায্য করে এবং এর ফলে কমে যায় কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা। যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য খুব ভালো একটি খাবার হচ্ছে ওটস।
  • ওটস মস্তিষ্কের সেরোটোনিনের মাত্রা বৃদ্ধি করে। সেরোটোনিন ঘুম ও রাগ নিয়ন্ত্রণ করে, এটি দুশ্চিন্তা দূর করে মন ভালো রাখতেও সাহায্য করে।
  • ওটস এর মধ্যে রয়েছে আন্টি অক্সিডেন্ট ও ফাইটো নিউট্রিয়েন্ট যা স্তন ও কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে ,যেসব নারী প্রতিদিন এক বাটি ওটস খান তাদের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি ৪১ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পায়।
  • ওটস ত্বকের জন্যও উপকারী। এটি ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা যেমন শুষ্কতা এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।

গর্ভাবস্থায় ওটস খাওয়া যাবে কি:

অবশ্যই গর্ভবতী মায়েরা ওটস খেতে পারবেন। গর্ভাবস্থায় অনেক মায়েদের কোষ্ঠকাঠিন্য ও ডায়াবেটিস  হয়ে থাকে। ওটস এ রয়েছে প্রচুর পরিমাণে মিনারেলস ও ফাইবার যা গর্ভবতী মায়েদের ব্লাড সুগার কন্ট্রোল করতে ও ফাইবারের চাহিদা পূরণ করতে সাহায্য করে।

ওটস খাওয়ার সঠিক সময়:

আপনি যখন খুশি তখন ওটস খেতে পারেন। তবে গবেষণায় দেখা গেছে ,ওটস খাওয়ার সঠিক সময় সকাল বেলার নাস্তা হিসেবে। এতে করে আপনার শরীরের মেটালিজম পাওয়ার বুস্ট আপ হয়ে যায়। তবে রাতেও ওটস খেতে পারেন।

ওটস খাওয়ার পদ্ধতি:

 ওটস খাওয়ার সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর পদ্ধতি হলো এতে দুধ এবং কিছু ফল মিশিয়ে ব্রেকফাস্টে খেলে অথবা সারারাত  দুধের সাথে বা দইয়ের সাথে ভিজিয়ে রেখে সকালে এর মধ্যে কিছু চিয়া সিড বা ফল দিয়ে খেতে পারেন। কিন্তু আপনি যদি কোলেস্টরলের রোগী হয়ে থাকেন তবে অবশ্যই দই এবং দুধ বাদ দিতে হবে. আপনি চাইলে এর মধ্যে বাদাম, খেজুর দিয়েও খেতে পারেন। এছাড়া ওটস এর  রুটি, খিচুড়ি বানিয়ে খেতে পারেন।

বাচ্চাদের কি ওটস খাওয়ানো যাবে এবং বাচ্চাদের জন্য ওটসের উপকারিতা:

ওটস এ  খনিজ, ভিটামিন, মিনারেলস পরিপূর্ণ থাকায় ওটস বাচ্চাদের জন্য একটি আইডিয়াল ফুড। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা রিকমেন্ড করে বাচ্চাদের ৬ মাস পর থেকে ওটস খাওয়ানোর জন্য। ছোটদের ওটস বড়দের  ওটস বলে আলাদা কিছু নাই ,শুধু প্রসেসিং করে আমাদের সামনে আনা হয়। ওটস যতক্ষণ পেটে থাকে ততক্ষণ পেটে একটা ফুলনেস থাকে। এতে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন থাকায় বাচ্চাদের গ্রোথের জন্য সাহায্য করবে। ওটস শরীরে চিনির পরিমাণ বাড়ায় না তাই এটি সকালের নাস্তায় বাবুদের জন্য একটি স্বাস্থ্যকর খাবার। উন্নত বিশ্বে ওটস খাবারটিকে খুবই স্বাস্থ্যসম্মত হিসেবে ধরা হয়। ওটস বাচ্চাদের ওজন বাড়াতে সাহায্য করে।

নিচে আমরা ৫ ধরনের ওটস সম্পর্কে জানব

Whole oats groats: এটি সবচেয়ে বেশি unprocessed থাকে.বাজারেও কিনতে পাওয়া যায় এটি প্রসেসিং করা থাকে না বলে রান্না করতে ৩৫ থেকে ৪৫ মিনিট সময় লাগে. এটি কোন রকম রাসায়নিক বিক্রিয়ার মধ্যে যায় না বলে এটি সবথেকে স্বাস্থ্যসম্মত.

Steel cut oats: এটা কিছুটা প্রসেস করা থাকে তাই রান্না করতে ১৫ থেকে ২০ মিনিট সময় লাগে এটি অনেক স্বাস্থ্যসম্মত এবং যথেষ্ট পুষ্টিগুণ সম্পন্ন।

Rolled oats:  এই ওটসটি খুব জনপ্রিয়। এটি রোল করে স্টিম করা হয়। এটিও অনেকটা প্রসেস করে বাজারজাত করা হয়। এটি তিন থেকে পাঁচ মিনিটে রান্না করা যায়।

Quick oats:  রোলড ওটস এর চেয়ে আরো বেশি প্রসেস করা দুই থেকে তিন মিনিটে তৈরি করা যায়।

Instant oats:  হাফ কুক করা থাকে। আমরা জানি ইনস্ট্যান্ট কোন খাবার আমাদের শরীরের জন্য ভালো নয় তাই ইনস্ট্যান্ট খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে।

এই ৫ ধরনের ওটস এর মধ্যে Steel cut oats  এবং Rolled oats সবচেয়ে ভালো। Steel cut  রান্না করতে একটু সময় লাগে তাই সেক্ষেত্রে Rolled oats এ সময় কম লাগায় এটি জনপ্রিয়। ওটসএর সাথে খেজুর,বাদাম দুধ অথবা অন্তত একটি ফল দিয়ে বাচ্চাকে খেতে দিতে হবে।

ওটস খাওয়ার অপকারিতা :

ওটস সাধারণত স্বাস্থ্যকর এবং উপকারী হলেও প্রয়োজনের অতিরিক্ত ওটস খেলে হতে পারে নানা সমস্যা। প্রয়োজনের অতিরিক্ত ওটস খেলে হতে পারে নানা সমস্যা। নিচে কিছু অপকারিতা উল্লেখ করা হলো:

প্রাকৃতিকভাবে গ্লুটেনমুক্ত ওটস  প্রক্রিয়াজাতকরণে অনেক সময় গম, বার্লির মতো গ্লুটেন ও যুক্ত হয় যাতে বাড়তে পারে এলার্জিজনিত সমস্যা। ওটস এর উচ্চ  ফাইবার পেট ফাঁপা, গ্যাস ও হজমের সমস্যা করতে পারে। ওটস এ বেশি ফসফরাস থাকায় কিডনি রোগীদের জন্য এটি সমস্যার কারণ হতে পারে। ওটস রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক, তবে যারা ইতোমধ্যে ডায়াবেটিসের জন্য ওষুধ সেবন করেন তাদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ওটস খাওয়া রক্তে শর্করার মাত্রা অতিরিক্তভাবে কমিয়ে দিতে পারে। তাই নিয়ম মেনে  চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খেতে হবে ওটস।

বিভিন্ন ধরনের খাবারের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে জানতে ভিজিট করুন TEST FOOD BD

Nusrat Jahan

View Comments

Recent Posts

গাজর (carrot) এর উপকারিতা

গাজর (Carrot) খুবই জনপ্রিয় একটি শীতকালীন সবজি হলেও এখন সব মৌসুমে কমবেশি পাওয়া যায়। গাজর…

2 months ago

মিষ্টি আলুর(Sweet Potato)পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা

মিষ্টি আলু (Sweet Potato) একটি মিষ্টি স্বাদের কন্দজাতীয়,স্টার্চযুক্ত, সবজি। যা মূলত এর মিষ্টি স্বাদ ও…

3 months ago

বিটরুট(Beetroot)এর পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা

বিটরুটকে (Beetroot) সাধারণ ভাষায় আমরা বিট বলে থাকি। এর বৈজ্ঞানিক নাম BETA VULGARIS। লাল বা…

3 months ago

চিয়া বীজ (Chia seed)এর উপকারিতা, খাওয়ার নিয়ম ও অপকারিতা

চিয়া বীজ মরুভূমিতে জন্মানো সালভিয়া হিস্পানিকা উদ্ভিদের বীজ। চিয়া বীজ মধ্য ও দক্ষিণ মেক্সিকোতে অবস্থিত…

3 months ago